রিয়াদুন্নবী রিয়াদ নিজস্ব প্রতিবেদক:
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরকে ফুল, চকলেট, কার্ড ও উপহার দেয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এটি শুধু ভালোবাসার নয়, বরং নোংরামি, অনৈতিকতা ও বাণিজ্যিকীকরণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। অনেকেই জানেন না, এই দিবসের ইতিহাস আদৌ কি ভালোবাসার? নাকি এর শেকড় রয়েছে নিষিদ্ধ সম্পর্ক ও রোমান সাম্রাজ্যের বিকৃত সংস্কৃতিতে?
ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি: কীভাবে এলো এই দিন?
প্রাচীন রোমান উৎসব “লুপারকালিয়া”
ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি সম্পর্কে গবেষকরা মনে করেন, এটি এসেছে “লুপারকালিয়া” (Lupercalia) নামের একটি বিতর্কিত উৎসব থেকে।এটি ছিল ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পালিত এক পৌত্তলিক উৎসব, যেখানে উর্বরতার দেবতা লুপারকে খুশি করতে পশু বলি দেওয়া হতো।পুরুষরা মহিলাদের চামড়ার চাবুক দিয়ে মারত, যাতে তারা উর্বর হয়!এরপর লটারির মাধ্যমে নারী-পুরুষ জুটি তৈরি করা হতো, যেখানে তারা একসঙ্গে রাত কাটাতো, যা অনেক সময় অবৈধ সম্পর্কে গড়াত।খ্রিস্টান ধর্ম চালু হওয়ার পর এই উৎসব বন্ধ করা হয়, কিন্তু পরবর্তীতে এটিকে নতুন রূপে “ভালোবাসা দিবস” হিসেবে প্রচলন করা হয়।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের কাহিনি: সত্য নাকি মিথ?
ভালোবাসা দিবসের সঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের গল্প জড়িত।৩য় শতাব্দীতে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস II ঘোষণা করেন, সৈন্যদের বিয়ে করা নিষিদ্ধ, কারণ তার মতে, বিয়ে করলে সৈন্যরা দুর্বল হয়ে পড়বে।কিন্তু সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের এক যাজক গোপনে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিয়ে করাতেন।এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।কথিত আছে, মৃত্যুর আগে তিনি কারারক্ষীর মেয়ের প্রেমে পড়েন এবং তাকে “তোমার ভ্যালেন্টাইন” লিখে একটি চিঠি দেন।
তবে এই কাহিনির ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। অনেক গবেষক মনে করেন, এটি গুজব বা বানানো গল্প মাত্র, যা পরবর্তীতে ভালোবাসা দিবসকে রোমান্টিক করতে ব্যবহার করা হয়েছে।
বর্তমানে ভালোবাসা দিবস: ভালোবাসা নাকি বাণিজ্যিক উৎসব?
বর্তমানে ভালোবাসা দিবসের প্রকৃত অর্থ অনেকটাই হারিয়ে গেছে।এই দিনে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে গিফট, কার্ড, ফুল ও চকলেট কেনা হয়।বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো একে পণ্যে পরিণত করেছে।ভালোবাসার পরিবর্তে লোক দেখানো উপহার, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট ও ফাঁকা আবেগ প্রকাশ বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস: নোংরামির নতুন উৎসব?
বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস এখন অনৈতিক সম্পর্কের দিন হয়ে উঠছে বলে অনেকেই মনে করেন।তরুণ-তরুণীরা বিপথে যাচ্ছে, হোটেল-মোটেলগুলোতে অনৈতিক কার্যকলাপ বাড়ছে।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্ক, রেস্টুরেন্ট ও ব্যক্তিগত জায়গায় সময় কাটায়।সামাজিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি অশ্লীল সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠছে।
ভালোবাসা কি শুধুই এক দিনের?
ভালোবাসা মানে শুধু উপহার, ডেট বা শরীরী সম্পর্ক নয়, বরং এটি দায়িত্ব, সম্মান ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। প্রকৃত ভালোবাসা একটি দিনের জন্য নয়, বরং প্রতিদিনের জন্য। যদি ভালোবাসা দিবস সত্যিকারের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হতো, তাহলে তা পবিত্র ও নৈতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু বর্তমান সমাজে এটি শুধুমাত্র বাণিজ্যিক, অনৈতিক ও বিকৃত এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদের উচিত, সংস্কৃতি, ধর্ম ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ভালোবাসার প্রকৃত রূপ চর্চা করা।