মাহফুজার রহমান (মাহফুজ)
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি সম্পর্কে আমাদের তেমন কোন ধারনা নেই বললেই চলে। দিবসটির তাৎপর্যগত দিকটি অনেকের কাছে অধরা থাকলেও আকাশ সংস্কৃতির বিস্তারের প্রভাব দিবসটিকে বাংলাদেশের মানুষের কাছেও বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে। এবার আসা যাক বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইতিবৃত্তের দিকে
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে নয়,বরং অনেকের সাথে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল,আর নৈতিকতার অবক্ষয়ও রোধ করা প্রয়োজন ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন।সেই অন্ধ মেয়েকে তিনি নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেন।কিন্তু দিনে দিনে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়, তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।মৃত্যু দন্ড দেয়ার পূর্বে ভ্যালেন্টাইনকে খেতে দেয়া রুটিতে তিনি সেই মেয়টির নাম লিখে রেখেছিলেন। পরবর্তীতে এই ঘটনাটি সবার হৃদয়ে দাগ কেটেছিল। আর সেই দিনটি ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল।এই ঘটনার ২২৭ বছর পর, সেই ঘটনার স্মরণে ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন' দিবস ঘোষণা করেন। যা পরবর্তীতে বিশ্বের অনেক দেশেই পালিত হতে থাকে।
বাংলাদেশে সর্বশেষ সংস্কারকৃত বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে বসন্ত উৎসব তথা পহেলা ফাল্গুন উদযাপিত হয়। একই দিন ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় বিধায় অনেকের কাছেই এই দিবসটি বেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। তবে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এই দিনটি বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আরও ভিন্ন উপায়ে উদ্যাপন করতে উৎসাহি হয়ে উঠে।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম শফিক রেহমান, যায়যায়দিন পত্রিকার সাংবাদিক এবং সম্পাদক, ১৯৯৩ সালে ভালোবাসা দিবসটি পালন করেন। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করার সময় পশ্চিমা সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। আর সেই ভাবধারাকে যায়যায়দিন পত্রিকার মাধ্যমে তিনি দেশবাসীর নিকট তুলে ধরেন। বাংলাদেশে তাকে ভালোবাসা দিবসের জনকও বলা হয়। এই দিনে, বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষ প্রেমিক প্রেমিকা, বন্ধু বান্ধবী, স্ত্রী এবং স্বামী, মা এবং সন্তান, ছাত্র এবং শিক্ষক ফুল, চকলেট, কার্ড এবং অন্যান্য জিনিস আদান প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন। এই দিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রসমুহ কানায় কানায় পূর্ণ থাকে।বাংলাদেশেও বর্তমানে এই দিবস পালন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে। পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির মিশ্রণে ভিন্নভাবে "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস" নামে এটি পালিত হয়।এই দিনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে হোটেল, রেস্টুরেন্টে বিশেষ খাওয়া দাওয়া, আমোদ ফুর্তি করতে দেখা যায়। পাশাপাশি উপহারের দোকানগুলোতেও দেখা যায় বাড়তি ভিড়। তবে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ধারায় বাংলাদেশে বিশেষ করে তরুণ সমাজের কাছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের যে তাৎপর্যের ব্যাপক অবক্ষয় লক্ষনীয়। সাংবাদিক শফিক রেহমান যে দৃষ্টি ভঙ্গিতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের পরিচয় তুলে ধরেছিলেন তা অনেকাংশে অর্থহীন বললেও অত্যুক্তি হয় না।
তবে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের কিছু কিছু মানুষ মনে করেন,' সাংস্কৃতিক এবং ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ভালোবাসা দিবস পালন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ শরীয়তে দিবসটির কোন ভিত্তি নেই।'