রিয়াদুন্নবী রিয়াদ নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘আমি তাঁর পেটে ঘুষি মারি, মাটিতে পড়ে যায়, বুকের ওপর উঠে গলা চেপে ধরি, মারা যায়। পরে চাকু দিয়ে গলা থেকে বডি বিচ্ছিন্ন করি।’ রংপুরের পীরগঞ্জের দেলোয়ারা বেগম ওরফে ঝিনুকমালাকে (৩০) নিজ হাতে হত্যা করার ঘটনা আদালতে এভাবেই বর্ণনা করেছেন গ্রেপ্তার আতিকুর রহমান (৩৫)।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন আতিকুর। কয়েক দিন ধরে চেষ্টার পর গতকাল মঙ্গলবার তাঁর ওই জবানবন্দি দেওয়ার তথ্য আদালত থেকে পাওয়া যায়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে আতিকুর রহমান দেলোয়ারার চার বছর বয়সের শিশুসন্তান সায়মার স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ভয়ে কাউকে না জানিয়ে নিজ বাড়ির পাশে গভীর রাতে গর্ত খুঁড়ে সায়মার লাশ লুঙ্গিতে পেঁচিয়ে সায়মার লাশ মাটিচাপা দিয়েছিলেন বলে তিনি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন।
শিশু সায়মার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আদালতে দেওয়া আতিকুরের জবানবন্দির সঙ্গে সন্দেহ পোষণ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক। তিনি বলেন, আতিকুর দেলোয়ারা বেগমকে হত্যা ও তাঁর চার বছর বয়সের নিখোঁজ সন্তান সায়মার লাশ গুম করার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেও ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে তিনি হত্যা করে থাকতে পারেন। শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। চিকিৎসকের প্রতিবেদন হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। তবে ঘটনা দুটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
আতিকুরের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি মোতাবেক, আতিকুরের স্ত্রী জর্ডানে থাকেন। ঝিনুকমালাও জর্ডানে যেতে চাপাচাপি করলে
আতিকুর পাসপোর্ট করে দেওয়ার পর তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় এনে রাখেন। এরপর ঝিনুকমালার শিশুসন্তান সায়মাকে নিয়ে আতিকুর পীরগঞ্জের নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। রাতে শিশুটির জ্বর এলে ওষুধ খাওয়ানোর পর মারা যায়। পরে ভয়ে কাউকে না জানিয়ে নিজ বাড়ির পাশে কোমরসমান গর্ত খুঁড়ে গভীর রাতে শিশুটিকে তিনি মাটিচাপা দেন বলে আদালতে জানান।
আতিকুর আদালতে বলেন, শিশুটিকে মাটিচাপা দেওয়ার পরদিন তিনি ঢাকায় যান ঝিনুকমালার কাছে। এরপর গাইবান্ধার সাঘাটা ও দিনাজপুরে অনুষ্ঠিত যাত্রাগানে অংশ নেন তাঁরা। ১৪-১৫ দিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। পথে দিনাজপুরের সিংগারীঘাটে গিয়ে নৌকাযোগে করতোয়া নদী পার হয়ে রাতে চরে যান এবং সেখানে তাঁরা শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হন। রাত ৯টার দিকে পীরগঞ্জের বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুরের বাড়ির পাশে কলাবাগানে গিয়ে ঝিনুকমালা মাদক সেবন করলে বাধা দেন আতিকুর। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ঝিনুকমালা আতিকুরকে লাথি মারলে তিনি পাল্টা ঝিনুকমালার পেটে ঘুষি মারেন। এতে ঝিনুকমালা মাটিতে পড়ে গেলে গলা চেপে হত্যার পর চাকু দিয়ে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন আতিকুর। এরপর বিচ্ছিন্ন মাথা সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে করতোয়া নদীর টেংরারদহ চরে নিয়ে গর্ত করে মাটিতে পুঁতে রাখেন।
৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়ন পরিষদের বড় বদনাপাড়া গ্রামের অদূরে মরিচখেত থেকে দেলোয়ারা বেগম ওরফে ঝিনুকমালার মাথাহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন সকালে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক করা হয় আতিকুর রহমানকে। তাঁর দেওয়া তথ্য মোতাবেক উদ্ধার হয় করা ঝিনুকমালার বিচ্ছিন্ন মাথা। ৯ ফেব্রুয়ারি আতিকুরের দেওয়া তথ্যে তাঁর বাড়ির পাশে মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় ঝিনুকমালার নিখোঁজ চার বছর বয়সের সন্তান সায়মার লাশ। এ ঘটনায় ওই দিনেই স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা আতিকুর রহমানের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেন।