নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এখন আর আগের অবস্থানে নেই। এক সময় এটি দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সরব ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এটি রাজনৈতিক কাঠামোর অংশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, “বৈষম্যবিরোধী অথবা সমন্বয়ক পরিচয়ের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই।” তার ভাষ্যমতে, এই আন্দোলনের পথ ধরে একটি ছাত্র সংগঠন তৈরি হয়েছে, যা পরে রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে, যারা এখনো ‘বৈষম্যবিরোধী’ পরিচয় ব্যবহার করছে, তাদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার লক্ষ্যে। বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও চাকরির বাজারে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই আন্দোলন দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিস্তৃতি লাভ করে, যেখানে তারা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারের দাবিতে আওয়াজ তোলে।
একটি ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক সংগঠনে রূপান্তর স্বাভাবিক ঘটনা। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই রূপান্তর কি আদৌ বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের মূল চেতনাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে? রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে প্রবেশের ফলে এই দল কি আগের মতোই বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, নাকি ক্ষমতার ভারসাম্যের কারণে তাদের অগ্রাধিকার বদলে যাবে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি অংশ এখনও সামাজিক পর্যায়ে সক্রিয় থাকার কথা বললেও, তাদের ভবিষ্যৎ গতিপথ এখনো অস্পষ্ট। সংগঠনটির কিছু নেতা মনে করেন, দলীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করার ফলে তাদের কার্যক্রম আরও প্রভাবশালী হতে পারে। তবে সমালোচকরা বলছেন, রাজনৈতিক রূপান্তরের ফলে হয়তো আন্দোলনের আসল লক্ষ্যই ম্লান হয়ে যাবে।
সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, এটি আন্দোলনের স্বাভাবিক অগ্রগতি, যেখানে রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হবে। আবার অনেকে মনে করেন, রাজনীতিতে প্রবেশ মানেই মূল আদর্শ থেকে সরে যাওয়া, এবং এতে করে আন্দোলনের আসল উদ্দেশ্য ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে এর আগেও বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে, কিন্তু সব দলই কি তাদের মূল চেতনা ধরে রাখতে পেরেছে? ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে গিয়ে দলীয় স্বার্থই মুখ্য হয়ে উঠেছে।
এখন দেখার বিষয়, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কি সত্যিই বৈষম্যবিরোধী আদর্শ ধরে রাখতে পারবে, নাকি রাজনীতির ঘূর্ণিতে হারিয়ে যাবে? আন্দোলনের পুরনো কর্মীরা কি এ দলকে সমর্থন করবেন, নাকি তারা নতুন কোনো বিকল্প পথ খুঁজবেন?
আপনার মতামত কী? বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এই পরিবর্তন কি ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক? মতামত জানাতে কমেন্ট করুন।