রংপুর প্রতিনিধি:
দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতায় ঈদ যেন শুধুই আরেকটি দিন ফরিদা বেগমের (৩৫) জন্য। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘন্টা ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী গাউছিয়া বাজার এলাকার এই অসহায় নারী জীবনের প্রতিটি দিন পার করেন অনিশ্চয়তার মধ্যে। তার স্বামী মমিনুর ইসলাম দিনমজুর, যেদিন কাজ পান সেদিনই একটু ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়, আর কাজ না থাকলে উপোস থাকতে হয়।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়েও মমিনুরের হাতে নেই নিয়মিত আয়ের নিশ্চয়তা। সংসারে রয়েছে দুই শিশু সন্তান—চার বছরের মোবাশ্বের ও দুই বছরের রহমতউল্লাহ। ঈদ মানেই নতুন পোশাকের আনন্দ, কিন্তু মা-বাবার পক্ষে তাদের সে স্বপ্ন পূরণ করাও কঠিন।
সরেজমিনে ফরিদার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মাত্র ১০ হাতের একটি জরাজীর্ণ চালাঘরই তাদের সম্বল। বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতর পানি পড়ে, রান্নার নির্দিষ্ট জায়গা নেই, আসবাবপত্র বলতে এক ভাঙা চৌকি, ছেঁড়া কাঁথা-বালিশ। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও ফুরিয়ে গেছে। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েক মাস আগে দোকান থেকে বাকিতে মাংস কিনেছিলেন মমিনুর, কিন্তু আজও সেই টাকা শোধ করতে পারেননি। সংসারের এই দুরবস্থার কারণে বাজারে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
এই দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে ঈদের একটুখানি আনন্দ ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ফরিদার পরিবারের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে শাড়ি, পাঞ্জাবি ও শিশুদের পোশাক দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক আব্দুল আলীম প্রামাণিক, সদস্য সচিব কমল কান্ত রায়সহ অন্যান্য সদস্যরা। স্থানীয় সাংবাদিকদের এই মানবিক উদ্যোগ ফরিদার পরিবারে একটু হলেও স্বস্তি বয়ে এনেছে।
উপহার হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত ফরিদা বেগম বলেন, ‘সেমাই-চিনি আল্লাহ দিলে খাই, না হলে মুখেও তুলি না। হামার আবার ঈদ আছে বাহে! খাবারই জোটে না। এবার অন্তত আপনাদের দেওয়া সেমাই-চিনি আর বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা পেলাম, এইটুকুই শান্তি।’
সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সামর্থ্যবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।