নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরে মাদক মামলার সাক্ষী এক গ্রাম পুলিশ সদস্যকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর বিরুদ্ধে। গ্রেফতার হওয়া গ্রাম পুলিশের নাম আব্দুর রহিম ঝন্টু। তিনি গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
র্যাবের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর হাজীরহাট এলাকার উত্তম স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পালানোর চেষ্টাকালে আব্দুর রহিম ঝন্টুকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকে ৩৯০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে র্যাব বাদী হয়ে হাজীরহাট থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা করে।
তবে গ্রেফতারকৃত ঝন্টুর পরিবার এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। গ্রেফতারের পরদিন এক সংবাদ সম্মেলনে ঝন্টুর বাবা সাবেদ আলী জানান, তার ছেলে প্রায় অর্ধ শতাধিক মাদক ও চোরাচালান মামলার সাক্ষী ছিলেন। এ কারণে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। সম্প্রতি এক হামলার শিকার হওয়ার পর থানায় অভিযোগও দেন তিনি।
সাবেদ আলীর দাবি, গ্রেফতারের আগের দিন র্যাব সদস্য রাসেল পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ঝন্টুকে দেখা করতে রংপুর শহরে ডাকেন। পরদিন স্থানীয় দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে ঝন্টু সেখানে গেলে কৌশলে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। পরে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তোলেন পরিবার।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আজিজুল ইসলাম রবিউল জানান, গ্রেফতারের সময় তিনি ঝন্টুর সঙ্গে ছিলেন। তাদের ভাষ্যমতে, তারা দুজন মিলে আগে থেকেই মাদক কারবারিদের তথ্য প্রদান করে পুলিশ ও র্যাবকে সহযোগিতা করতেন। রবিউল বলেন, নির্ধারিত স্থানে গিয়ে তারা র্যাব সদস্য রাসেলের সঙ্গে দেখা করেন। কিছুক্ষণ পর আরও চার র্যাব সদস্য সেখানে উপস্থিত হন এবং রাসেলের পরামর্শে রবিউল কিছুদূর এগিয়ে যান। এরপর পেছনে ফিরে দেখেন ঝন্টুকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের জন্য পরিচিত। এলাকাটি থেকে উদ্ধার হওয়া বেশিরভাগ মাদক মামলায় সাক্ষী হিসেবে আব্দুর রহিম ঝন্টুর নাম পাওয়া যায়। তার সাক্ষ্য দেয়া ১৫টি মাদক মামলার নথিপত্র পাওয়া গেছে, যা পর্যালোচনা করে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান বলেন, আব্দুর রহিম ঝন্টু অনেক মাদক মামলার সাক্ষী ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত র্যাব সদস্য রাসেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একইভাবে র্যাব-১৩ সদর দপ্তরে যোগাযোগের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
নগরীর হাজীরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহ জানান, ৩৯০ পিস ইয়াবাসহ একজনকে র্যাব গ্রেফতার করেছে এবং তারা মামলার বাদী। এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে গ্রাম পুলিশের এমন গ্রেফতার ও ফাঁসানোর অভিযোগে এলাকায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে সচেতন মহল।